ব্লগ লেখার কল্যাণে মালয়েশিয়া ভ্রমণ, পর্ব-৩
মালাক্কার পথে প্রান্তরে
আজ থাকছে মেলাকা বা মালাক্কা নিয়ে এক অনিন্দ সুন্দর ভ্রমণ গল্প। মালয়েশিয়ার প্রাচীন রাজধানী ছিল মেলাকা। মালাক্কা প্রানালী কিন্তু এই মালাক্কার একেবারে ধারে কাছেই। ছোট্র এই শহরটি যেন ছবির মতন সুন্দর ছিম ছাম সাজানো। তাই এই ছোট মালয়েশিয়ার রাজ্যটি ভ্রমণ পিয়াসীদের এক অদৃশ্য চুম্বকের মত আকর্ষণ করে। আজ সে নিয়েই বিস্তারিত গল্প হবে।
হোটেল থেকে বের হলাম ১২ টার দিকে কারণ আমার ছোট ভাই আমার সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে না। তাই একটু দেরিতেই আমারও বের হতে হয়। আর মালয়েশিয়াতে পুরো দিন বাইরে থাকাটা চরম অত্যাচারও বটে। কারণ রোদের চরম তাপ। ১২ টার দিকে বের হয়ে আমরা একটি গ্রাব নিলাম Terminal Bersepadu Selatan এ যেতে। এটি কুয়ালা লামপুরের বেশ বড় সড় বাস স্ট্যান্ড। দেখতে কিন্তু মোটেই বাংলাদেশের বাস স্ট্যান্ডের মত না। বেশ সুন্দর মনে হবে কোন এয়ারপোর্টে এসে গেছেন। আমরা Melaka Sentral এ যাওয়ার জন্য টিকিট কাটলাম। আমার ছোট ভাই একটু দামী বাসে চড়বে। আসলে আমি তেমন কোন পার্থক্য পাই নাই। আমার জনপ্রতি RM 13.40 দিয়ে টিকিট কিনলাম। সাধারণত কমে যেতে চাইলে RM 10 দিয়েই যেতে পারেন। একই ধরণের বাস। এটাও মেশিন দিয়ে টিকিট কাটলাম। পুরো মালয়েশিয়া তে একই software ব্যবহার করে বাসের টিকিট কাটার জন্য। তাই এক বার ব্যবহার করলেই শিখে যাবেন।
আমাদের বাস ছিলো 1:00 pm এ। বাসে উঠতে নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে যেতে হয় নির্দিষ্ট গেট দিয়ে। যা সব কিছু টিকিটে লিখা থাকে। আমরা ৫ মিনিট আগে বাসে যেয়ে বসলাম। বাস ওই ৫ মিনিট আগেই আসে প্লাটফর্মে। বাসে করে মালাক্কাতে যেতে প্রায় 2 ঘন্টা 30 মিনিটের মত লাগে। বাস Melaka Sentral এই নেমে দেয়। Melaka তেও grab আছে। আমরা নেমে ফ্রেশ হয়েই grab কল করি। হোটেলে যাব না। কারণ সাথে ব্যাগ পোটরা কুয়ালা লামপুরে হোটেলেই রেখে আসছি। তখন বিকাল প্রায় ৪ টা বেজে পার হয়ে গিয়েছিলো। আমরা সোজা Upside Down House Gallery Melaka তে গিয়েছিলাম গ্রাব নিয়ে ভাড়া পড়েছিলো RM 9। Upside Down House Gallery বাংলাদেশে নতুন হলেও এটি বর্হিবিশ্বে অনেক পুরাতন। তবে আমার কাছে নতুন ছিলো। আমি যদিও এটার কৌশল টা জানতাম তাও বাস্তব অভিজ্ঞতা বলে কথা। জন প্রতি RM 22 করে নেয় এন্ট্রি ফি। বেশ ঢুকে ছবি তুলতে ভুললাম না। ওরাই অবশ্য ছবি তুলতে সাহায্য করে। বেশ মজার অভিজ্ঞতা।
কাউকে প্রথম না বললে সেও বোকা হয়ে যাবে কিভাবে এমন ছবি তোলা যায়। অনেক দিনের একটা শখ ছিলো এভাবে ছবি তোলার। অবশেষে মালাক্কাতে সে শখ পূরণ হলো।
Upside Down House Gallery থেকে বের হয়ে বেশ ক্ষুধার্ত আমরা। বেশ কাছে এক রেস্টুরেন্ট থেকে দুপুরের খাবারও খেয়ে নিলাম। মালয়েশিয়ান খাবার ছিলো। ভাত, মাংস, মাছ মনে হয় নিয়েছিলাম। তারপর রেস্ট নিয়ে বের হয়ে পড়লাম শহরটা দেখতে।
এরপর আমরা কিছু দূর হেঁটে ঘুরে টুরে Menara Taming Sari তে উঠলাম। এটা 110 m উচ্চতার একটি রাইড। এটার admission fee RM 23 per person।
উপরে ৭ মিনিটের মত রাখে। পুরো শহরের ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ দেখা যায়। অসাধারণ সুন্দর একটি শহর। মনে হচ্ছিল ছবির মত সুন্দর করে সাজানো। আমরা ছবি তুলতেও ভুলি নাই।
সমুদ্র আর সাজানো গোছনো সুন্দর শহর। এক চমৎকার পরিবেশ।
এরপর পুরো শহর হেঁটে বেড়াতে লাগলাম। অনেক সুন্দর সুন্দর স্থাপনা আছে। কারণ এখানে যুগে যুগে পর্তুগিজ, ডাচ, ইংরেজ সবাই এসেছে এখানে মালাক্কা প্রণালী ধরে। শাসন করেছে যুগের পর যুগ। তাই এখানে সব রকম সভ্যতার দেখা পাওয়া যায়।
আমরা Christ Church, A Famosa, Stadthuys, Windmill Dutch Square Melaka, Cheng Hoon Teng Temple, Baba & Nyonya Heritage Museum সব কিছুই ঘুরে দেখলাম। Windmill Dutch Square Melaka টা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে। বিশেষত রাতের দৃশ্য। বাহারী আলোক সজ্জা আর পাখির কিচির মিচির। আহা সে কি এখন মনোলোভা পরিবেশ।
যদি ও আমি ইচ্ছা থাকা সত্বেও Melaka Sultanate Palace Museum, Melaka Straits Mosque, Kampung Hulu Mosque, Maritime museum, Submarine Museum, Melaka Stamp Museum, Church of Saint Paul এসব সময়ের অভাবে দেখা হয় নি। আর হেঁটে কত দেখা যায়। আমার ছোট ভাইও বেশ ক্লান্ত ছিলো।
বিশেষত রাতে এসব রিক্সাতে করে ঘুরে বেড়াতে পারেন। অসম্ভব সুন্দর অনুভূতি তা বোঝানো যাবে না। সমুদ্র থেকে আগত মৃদু বাতাস। আর রিক্সাতে মালয় ভাষার গান সব মিলিয়ে অসাধারণ।
দিনের মেলাকার চেয়ে রাতের মেলাকা আরও বেশি মনোলোভা। বিশেষত আমি উপদেশ দিব Melaka River Cruise এ অংশ নিতে। মেলাকা নদী আলোক সজ্জায় যেন এক স্বর্গ। আমি আর আমার ছোট ভাই সারা রাত প্রায় ৩ টা পর্যন্ত বসে ছিলাম নদী পাশে। সারা রাতে এ উপভোগ করা সময় মনে হয় আমি কোন দিন ভুলব না। এ এক অপার সৌন্দর্য।
রাতের মেলাকা দেখে মনে হচ্ছিলো কোন এক অজানা শিল্পী তার তুলিতে আশে পাশের প্রকৃতিকে রং করেছে।
Jonker Street Night Market রাতে খাবারের জন্য এক স্বর্গ। এখানে অবশ্যই যাবেন। প্রচুর কেনা কাটাও করতে পারবেন। আমরা অবশ্য রাতে খেয়েছিলাম Mcdonalds এ।
মালাক্কাতে দেখার মত অনেক কিছু আছে। আমরা ১ রাত ছিলাম ২ দিন ছিলাম। আমি উপদেশ দিব যারা সত্যিকারের ভ্রমণ পিপাসু তারা ২ রাত ৩ দিন থাকতে পারে। কারণ মেলাকাতে দেখে শেষ করার মত জিনিসের অভাব নেই। UNESCO World Heritage সিটি হিসাবে ঘোষণা করেছে মেলাকা কে। যদি পরের বার কখনও মালয়েশিয়া তে যাই আমি অবশ্যই ২ রাত ৩ দিন থাকার মত পরিকল্পনা করে যাবো =D যদিও আমার ছোট ভাই প্রথমে যেতে না চাইলেও পরে সেও আশার সময় বলতে বাধ্য হয়েছে ভাই আসলেই এখানে ২ রাত থাকা দরকার।
আর মেলাকায় হোটেল নিবেন Windmill Dutch Square থেকে 500 m এর ভিতর তাহলে সারা রাত শহরেই ঘুরে বেড়িয়ে কাটাতে পারবেন।
আমার ফিরেছিলাম Melaka Sentral থেকে TBS (Terminal Bersepadu Selatan)। ভাড়া পড়েছিলো জনপ্রতি RM 10 করে। আর Melaka শহরের ভিতর আমরা grab ই ব্যবহার করেছি যখন লাগে।
আগামী পর্ব লিখব কুয়ালা লামপুরের অলি গলির প্রতিটির খরব নিয়ে। সাধারণত যে গুলো আমাদের দেশের ভ্রমণ কারীদের নিকট তেমন পরিচিত না হলে বহিঃবিশ্বের ভ্রমণ কারীদের নিকট খুবই মনোলোভা। আশা করি নতুন তথ্য বা নতুন কিছু জানতেও পড়বেন পরের পর্বটি।
বাকি পর্ব গুলে পড়তে এখানে ঢু মারতে পারেন।
পর্ব ১ঃ bit.ly/kl-part1 (কুয়ালা লামপুরে সামান্য ঘুরাঘুরি)
পর্ব ২ঃ bit.ly/gn-part2 (স্বপ্নপুরি Genting Highlands নিয়ে গল্প সপ্প)
পর্ব ৪ঃ bit.ly/kl-part4 (কুয়ালা লামপুরের অলিতে গলিতে ঘুরাঘুরি)
পর্ব ৫ঃ bit.ly/lk-part5 (দ্বীপ পুরি Langkawi চষে বেড়ানো)
পর্ব ৬ঃ bit.ly/kl-part6 (মালয়েশিয়া ঘুরব, নিজেই ট্যুর প্যাকেজ বানাব)