ব্লগ লেখার কল্যাণে মালয়েশিয়া ভ্রমণ, পর্ব-৫
দ্বীপ পুরি Langkawi চষে বেড়ানো
আজকের পর্ব লিখব প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যে দ্বীপ শহর লংকাউই নিয়ে। মালয়শিয়ার এই উত্তর-পশ্চিমের দ্বীপ শহর টি কুয়ালা লামপুর থেকে ৪১৪ কিলো দূরে। ৯৯ টি দ্বীপ নিয়ে গড়া একটি দ্বীপ পুঞ্জ হল লংকাউই।
প্রথম পর্বেই বলেছি আমি নিজেই Kuala Lumpur-Langkawi-Kuala Lumpur এর টিকিট সরাসরি Airasia তে কিনছিলাম। আমাদের ফ্লাইট ছিলো ফেব্রুয়ারি ২ তারিখে। এটা তে কোন লাগেজ এর অনুমতি ছিলো না তাই লাগেজ শহরের হোটেলেই রেখে গিয়েছিলাম। খালি ৭ কেজি Hand Bag নেওয়ার অনুমতি ছিলো।
ছবির মত অপরুপ সৌন্দর্যের এক দ্বীপ লংকাউই। ফ্লাইট থেকে যতটা সম্ভব ছবি তোলার চেস্টা করেছিলাম।
প্রথমেই আসি হোটেল নিয়ে। আমরা যে ভুলটি করেছিলাম Pantai Cenang লিখে Booking.com এ সার্চ করেছিলাম প্রথমে যে হোটেলটি এসেছিলো সেটাই নিয়েছিলাম। 4-Star হোটেল ছিলো। আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা বেশ ভালো হোটেলে থাকবে লংকাউই তে। আমিও ভালো হিসাবে নিয়েছিলাম। আসলে Pantai Cenang থেকে প্রায় ৬ কিলো দূরের হোটেল ছিলো। প্রতি বার বিচে যেতে RM 12–15 এর মত ভাড়া যেত। আর হ্যাঁ লংকাউই তে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ওভাবে নেই। grab ই ব্যবহার করতে হবে। তাই সকলে জন্য উপদেশ আপনারা লংকাউই তে হোটেল নেওয়ার সময় Pantai Cenang Beach এর 500m এর ভিতরই নেওয়ার চেস্টা করবেন। তাহলে বিচ থেকে হেঁটেই হোটেলে যেতে পাবেন। আর বিচের আশে পাশের এলাকাটাই মূলত এখানে টুরিস্ট স্পট।
প্রথম দিন এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই হোটেলে গিয়ে ছিলাম। International airport কিন্তু অনেক ছোট এয়ারপোর্ট তবে অসম্ভব রকমের সুন্দর এয়ারপোর্ট ছিলো। হোটেলে যেয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়েই বের হয়ে পড়ি বিচে। আর বিচ তো অসাধারণ সুন্দর। বিশেষত সূর্যাস্তটা আমার সারা জীবন মনে থাকবে।
সমুদ্র পার থেকে ফিরে একটা হোটেলে রাতে খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরলাম রাতের ১১ টার দিকে প্রায়। সারা দিন বহু ছুটা ছুটি করেছি এবার একটু ঘুমানো দরকার।
পরের দিন বের হলাম Langkawi Cable Car এর উদ্দেশ্য। Mount Mat Cincang এর চূড়ায় এই ক্যাবল কার এবং SkyBridge টি। পর্বতটি সমুদ্র পৃস্ঠ থেকে 709 m উঁচু। Langkawi Cable Car এর admission fee জনপ্রতি RM 85। এটা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম ক্যাবল কার। আর চূড়ায় Curved suspension bridge টিও বিশ্বের সবচেয়ে বড় suspension ব্রিজ। এ জায়গাটা থেকে সূর্যাস্ত খুব সুন্দর দেখা যায় বলে শুনেছি। তবে আমরা ততক্ষণ অপেক্ষা করি নাই।
Curved suspension bridge থেকে দূরের সমুদ্র আর ছোট ছোট জাহাজগুলো এক মনোরম সৌন্দর্য বিস্তার করে। বিভিন্ন কোণ থেকে পাহাড় আর সমুদ্রের দেখার অসাধারণ স্থান। এ সেতুটি ৪১০ ফুট লম্বা। আশে পাশের রক ফরমেশন গুলো নাকি ৫০ কোটি বছর আগের! সমুদ্র সমতল থেকে ২৩০০ ফুট উঁচুতে এই ব্রিজে হাঁটতে এক অসাধারণ অনুভূতি হয়। মাঝে মাঝে কিছু গ্লাসও দেওয়া আছে ব্রিজের নিচে দৃশ্য দেখার জন্য। এখান থেকে প্রতিবেশি থাইল্যান্ডের দ্বীপ গুলোও দেখা যায়। ব্রিজের অপর পাশে বিখ্যাত Telaga Harbor Park যা Yacht আর Sail Boat এর নিরাপদ ঘাঁটি।
ক্যাব কার থেকে নেমে বা যাওয়ার সময় Telaga Harbor Park এ ঢুকতে পারেন। ফ্রিতে যেতে পারবেন। অনেক সিনেমার শুটিং এখানে হয়েছে। আমার ছোট ভাই কিছুটা জোর করেই আমাকে নামতে দেয় নাই =D
আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা সে আজও Pantai Cenang Beach এ যাবে তার ইচ্ছা তেই আমাকেও যেতে হল। আসলেই এই সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যাস্তটা অসাধারণ উপভোগ্য।
আমার ছোট ভাইয়ের ইচ্ছা Snorkeling করার। বিচেই এক মহিলা ট্যুর এজেন্টের সাথে দেখা হয় সে দাম দেখায় RM 250 আমাদের জন্য ছাড়ে RM 200 দিবে। ভাবলাম নেই। ও সমুদ্রেই পাড়েই বসে হাওয়া খাচ্ছে আমি একটু ঘুরে আসি বিচের পাশের মার্কেট। পরে খুঁজে দেখলাম এখানে ২ ধরণের Snorkeling এর প্যাকেজ পাওয়া যায় Reef Platfrom Snorkeling Package যা RM 300 এর আশে পাশেই সম্ভব আর Payer Beach Snorkeling Package যা RM 150 এর আশে পাশেই সম্ভব। তাই যারা Snorkeling করবেন এই দুটো প্যাকেজ দেখে নিবেন। Jalan Pantai Cenang রোডে বেশি কিছু টুরিস্ট এজেন্ট আছে। ২-৩ টা ঘুরে একটু দাম যাচাই করে নিবেন।
Snorkeling ছাড়াও Island Hopping tour, Parasailing (এটা জোশ একটা একটিভি। এটা ও দাম যাচাই করে নিবেন), Mangrove River Safari tour বেশ কিছু একটিভি আছে যা ইচ্ছা হলেই করতে পারবে।
Snorkeling প্যাকেজ ঠিক করে রাতে খাবার খেয়ে সেদিনের মত ইস্তফা দিয়েছিলাম। আমাদের ফ্লাইট নিয়েছিলাম সন্ধ্যায় তাই সারা দিন কাজে লাগাতে পেরেছিলাম।
আমার ছোট ভাই সে Snorkeling করতে চলে যায় সকাল ৭ টায় উঠেই। আমি আরাম আয়েশ করি। আমার ইচ্ছা নাই Snorkeling করার। আমি ১২ টার দিকে বের হই Dataran Lang বা Eagle square এর উদ্দেশ্য। এই দ্বীপ পুঞ্জতে প্রচুর ঈগল আছে তাই এখানে Eagle square। একটি আইকনিক প্রতীক আরকি। আমার এই Eagle square হোটেল থেকে যেতে + ওখান থেকে সরাসরি এয়ারপোর্টে যেতে প্রায় RM 65 এর মত পড়ে যায়। বাংলা টাকায় প্রায় ১৩০০ টাকা! কি পরিমাণ ভালোবাসা থাকলে এমন করে একা ঘোরা সম্ভব হয় ভাবুন! ভ্রমণ প্রিয় মানুষেরা এমন পাগলই হয়। কিছু ছবি শেয়ার করি Eagle square এর।
এরপর ফিরেলাম এয়ারপোর্ট। তারপর কুয়ালা লামপুরে এক দিন থেকে পর দিন ঢাকার ফ্লাইট ধরেছিলাম। বাকি সেই একদিন কিছু মার্কেটিং করে সময় পারি দিয়েছি। রাত ৮ টায় ফ্লাইট ছিলো তাই ৩ টার ভিতরই রওনা দিতে হয়েছে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে।
শেষ হল মালয়েশিয়া ঘোরা ঘুরি এবারের মত। আর একটি পর্বে লিখব কিভাবে নিজে নিজে প্যাকেজ করবেন? কিভাবে সব কিছু নিজে নির্বাচন করবেন। আশা করি সেই পর্বটি ভালো লাগবে।
বাকি পর্ব গুলে পড়তে এখানে ঢু মারতে পারেন।
পর্ব ১ঃ bit.ly/kl-part1 (কুয়ালা লামপুরে সামান্য ঘুরাঘুরি)
পর্ব ২ঃ bit.ly/gn-part2 (স্বপ্নপুরি Genting Highlands নিয়ে গল্প সপ্প)
পর্ব ৩ঃ bit.ly/ml-part3 (মালাক্কার পথে প্রান্তরে)
পর্ব ৪ঃ bit.ly/kl-part4 (কুয়ালা লামপুরের অলিতে গলিতে ঘুরাঘুরি)
পর্ব ৬ঃ bit.ly/kl-part6 (মালয়েশিয়া ঘুরব, নিজেই ট্যুর প্যাকেজ বানাব)