ব্লগ লেখার কল্যাণে মালয়েশিয়া ভ্রমণ, পর্ব-১
কুয়ালা লামপুরে সামান্য ঘুরাঘুরি
মালয়েশিয়া নামটি শুনলেই প্রথমে চোখের সামনে ভেসে উঠে Petronas Twin Towers এর দুটো টাওয়ারের কথা। অপার সৌন্দর্যের দেশ। এবারের মালয়েশিয়া ভ্রমণ ছিলো পুরোটাই ব্যতিক্রম কারণ পুরো ভ্রমণে খরচ করেছি সর্বোসাকুল্যে মাত্র ১৬,০০০ হাজার টাকা। শুনতেই হোঁচট খেলেন নাহ? আসলে তাই খাওয়ার কথা! প্রায় ১০ দিনের ট্যুর! আসলে এখনেই রহস্য আছে।
আসলে প্রথম প্রথম ব্লগ লিখা যখন শুরু করলাম তখন বেশ বাহবা পেতাম। কিন্তু ব্লগের কল্যাণে যে ভ্রমণ করাও যাবে তা কখনও ভাবি নাই। থাইল্যান্ড ঘোরার পর আমি ব্লগ লিখেছিলাম সেটা পড়ে এক ছোট ভাই বায়না ধরল “ভাই আমাকে মালয়েশিয়ার ভিসা করার সহজ উপায় বলে দেন”। আমি বললাম এমনিই জমা দেও হবে। কিন্তু সে নাছোড় বান্দা কোন রিজেক্ট সে খাবে না। শেষমেশ ওকে সাহায্য করলাম। ও ভিসা পেয়ে খুশিতে আমাকে প্রস্তাব দিয়ে বসল ভাই, “আমি ভালো হোটেল ছাড়া থাকি না। একই খরচ হোটেলের এক জন গেলেও। আপনিও চলেন। আমি এয়ার ফেয়ার দিয়ে দিব নি। বাকিটা কিছু লাগলে আপনি যোগাড় করেন”। আমারও পরীক্ষা শেষ মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারের। পরীক্ষার পর প্রায় ১০-১৫ দিন আমাদের বন্ধই থাকে। রাজি হয়ে গেলাম। বললাম আচ্ছা যাও যাব তাহলে। আর আমি গেলে ওর সুবিধাও কিছুটা আগে বার ঘুরে গিয়েছিলাম তাই অনেক জায়গাতেই খরচ বাচায় দিতে পারব।
আমি এর আগে ২০১৯ সালেও মালয়েশিয়াতে গিয়েছিলাম সে হিসাবে অনেক কিছুই আমার চেনা জানা ছিলো। আমার এ বার ই-ভিসা লেগেছিল। তেমন কিছু লাগে নাই। এমনি পার্সপোর্টও জমা দিতে হয় নাই। যা যা দিয়েছিলাম তার একটা লিস্ট দেইঃ
১) পার্সপোর্টের ২-৩ নং পাতা এর ফটোকপি
২) Bank statement and solvency
৩) আগের বার মালয়েশিয়া যাওয়ার entry and exit সিলের ফটোকপি
৪) ভিজিটিং কার্ড
৩ দিন পর ই-ভিসা পেয়ে যাই। এরপর এয়ার টিকিট হোটেল বুকিং করার পালা। ছোট ভাইয়ের মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সে যাওয়ার ইচ্ছা কিন্তু আমার ভিসাটা হতে হতে ভাড়া ২৮ হাজার টাকাতে গিয়ে ঠেকল। আর কি করার নেওয়া হল না। ও আমাকে Airasia এর ৩০% ছাড়ের অফার দেখালো। আমি এর আগের বারও Airasia তে গিয়েছিলাম। আমি ওকে অভয় দিলাম। Airasia তেই যাব ভালোই হবে। আমার ভালোই লেগেছিল আগের বার। অবেশেষে ৩০% ছাড়ে আমরা জনপ্রতি ১৯,৫০০ টাকা তে পেয়ে গেলাম রিটার্ন টিকেট। আমাদের আবার Langkawi তে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। আমি আমার কার্ড ব্যবহার করে airasia.com থেকে ৩২ ডলারে এক একজনের রিটার্ন টিকেট কেটে ফেললাম। ওটাতেও ৩০% ছাড় ছিলো। অনেক কম টাকায় আমরা টিকিট করে ফেলছিলাম। এরপর হোটেল বুকিং। এটা প্রতি পর্বে বলব কোথায় থাকা সবচেয়ে ভালো।
আজ প্রথম পর্বে লিখব কুয়ালা লামপুর নিয়ে। যদিও আমরা দুই ধাপে কুয়ালা লামপুর ভ্রমণ করে ছিলাম। মাঝে আমরা Melaka তেও গিয়েছিলাম ১ দিনের জন্য।
আমরা গিয়েছিলাম ২৫ শে ফেব্রুয়ারিতে আর ফিরেছিলাম ৫ ই মার্চ। কুয়ালা লামপুর এ সকাল ৭ টার দিকে আমরা ল্যান্ড করে ছিলাম। ল্যান্ড করেই হুর মুর করে ইমিগ্রেশনে ছুটছিলাম কারণ এর আগের বার বিশাল লাইন পেয়েছিলাম। এবার পুরো ফাঁকা ছিলো। ইমিগ্রেশনে এ আমাকে কিছুই জিঙ্গাসা করে নাই। এমনকি রিটার্ন টিকেট টাও না। ছোট ভাইকে একটু জিঙ্গাসা করেছিল হোটেল বুকিং, ফিরতি টিকিট নিয়। ও বলেছিল আমরা ২ জন আসছি। শুনে ওকেও আর কিছু জিঙ্গাসা করে নাই।
ইমিগ্রেশন শেষে আমার আগে থেকেই প্লান ছিলো বাসে করে KL Sentral এ যাওয়া। আর হ্যাঁ সিম, এয়ারপোর্ট থেকে শহরে যাওয়ার জন্য আমি দেশে থেকেই 400 RM নিয়ে গিয়েছিলাম। আপনারা একজন হলে কমপক্ষে 150 RM নিয়ে যাবেন। একাধিক জন হলে হিসাব করে নিবেন।কারণ এয়ারপোর্টে ডলারের দাম অনেক কম দেয়। আমাদের সময় শহরে 100 USD = 419 RM আর এয়ারপোর্ট এ ছিলো 385 RM এর মত। দেশে রিঙ্গিতের দাম বেশি রাখে না। প্রায় সব money exchanger এ রিঙ্গিত পাওয়া যায়।
Airport to KL Sentral সবচেয়ে সস্তায় যেতে চাইলে আপনাকে বাসেই যেতে হবে। কারণ বাসে একজনের ভাড়া 12 RM করে। আর গ্রাবে গেলে পড়ে 65 + 7 (toll) পড়ে। আর ট্রেনে মানে KLIA Express ট্রেনে যেতে হলে পড়বে 55 RM করে একজনের। এজন্যই আমি বাসেই গিয়েছিলাম। কারণ বাস গুলো আমাদের দেশের এসি বাসের চেয়েও ভালো। বিজনেস ক্লাসের মত সিট। আর ট্রেনে যেতে ৩০ মিনিট আর বাসে যেতে ১ ঘন্টা এই আর কি। বাস থেকে KL Sentral এ নেমেই উপরে উঠে Monorail বা যে কোন ট্রেন ধরে আপনার ইচ্ছা মত গন্তব্যে চলে যাওয়া যায় অনেক সস্তায়। আমরা ২ জন ছিলাম তাই আমরা KL Sentral থেকে grab নিয়ে ছিলাম।
আর কুয়ালা লামপুর এ হোটেল নিতে হলে নিবেন Bukit Bintang এলাকায় Jalan Alor রোডে আশে পাশেই। ভালো হোটেল ২০-৩০ ডলার পার নাইটেই পেয়ে যাবেন। আর solo হলে টাকা বাচাতে চাইলে dorm এ থাকতে পারেন। ৪-৫ ডলার পার নাইটেই পেয়ে যাবেন ভালো dorm। আর খুব বেশি হলে Jalan Alor এর এক দু রোড পরেই নিবেন এতে আপনার অনেক টাকা বাচবে। কারণ Bukit Bintang এলাকা থেকে পুরো শহর টাই monorail বা MRT তে যুক্ত। পুরো শহরের মেট্রো রেলের ম্যাপটি পেতে Google Play Store এ kuala Lumpuer Metro Guide লিখে সার্চ করলেই Discover Ukraine LLC এর একটা অ্যাপস পেয়ে যাবেন। Install করে নিবেন। পুরো ম্যাপ আছে।
আর হ্যাঁ আরেকটি মজার তথ্য দিয়ে রাখি আপনি MyCity Pass কিনে নিতে পারেন। এতে আনলিমিটেড রাইড পাবেন rapidKL এর আওতা ভুক্ত LRT, MRT, Monorail and BRT তে। ১ দিনের জন্য লাগবে RM 10 আর ৩ দিনের জন্য RM 25। এটা আপনি rapidKL এর আওতা ভুক্ত যে কোন স্টেশনের কাউন্টারে জিঙ্গেস করলেই দিয়ে দিবে।
আর হোটেল বুকিংয়ের জন্য Booking.com বা agoda ব্যবহার করেন। Agoda তে কিছুটা কমে ১-২ ডলার কমে হোটেল পাওয়া যায়। নিজের সুন্দর একটি credit বা debit কার্ড থাকলে তো কথাই নাই। আমি Payoneer এর কার্ড ব্যবহার করি। তাই আমাকে কখনো লিমিট বা কিছু নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। আর হ্যাঁ KL or Malaysia তে গ্রাব ১২ টার পরে আর ক্যাশে কাজ করে না। আমি আমার Payoneer কার্ড বহু চেস্টা করেও এড করতে পারি নাই। তাই Jalan Alor রোডের আশে পাশে মানে ৫০০ মিটারের ভিতর হলে রাতে হেঁটেই যেতে পারবেন। আর Jalan Alor টুরিস্ট এলাকা। প্রায় ২-৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রাতে রাস্তায় Street singer রা গান করে। সেই পরিবেশ আর কি।
এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে আসতে আসতে ১১ টার বাজে। ২ টায় চেক ইন। সে বেটা ২ টার আগে রুম দিলে ১০০ রিঙ্গিত বাড়তি চায়। শুনে কিছুটা আমাদের রাগ ধরল। অবশ্য পরে ভাবলাম ব্যবসা বলে কথা। আমরা দুজন লাগেজ রেখে বেরিয়ে পড়লাম শহরটা একটু ঘুরতে। ঘুরতে ঘুরতে KLCC তে চলে গেলাম। আর Bukit Bintang থেকে KLCC তে Go KL এর ফ্রি বাসে করে যেতে পারেন। যদিও MRT তে যাওয়া যায়। আমার ইচ্ছাই ছিলো পয়সা বাচানো তাই ফ্রি বাসে গিয়েছিলা। বাস স্টেশনটার ছবি দিয়ে দিলাম সুবিধার জন্য।
KLCC তে যেয়ে ঘুরে বেড়িয়ে প্রায় ২ টার সময় আমাদের ক্ষুধা লেগে গেল। KLCC এর 4th floor এর food court খাওয়া দাওয়াটাও সেরে নিলাম আমার।
২ টার সময় ফিরে চেক ইন করে দিলাম ঘুম। উঠলাম সন্ধ্যা ৭ টার পর। উঠার পর বের হলাম রাতের কুয়ালা লামপুর দেখতে। প্রথম দিনের রাতে KLCC আর বুকিত বিনতাং এই কাটিয়ে রাত প্রায় ২ টার দিকে MyCar ধরে হোটেলে ফিরলাম। যদিও বেটা 7 rm এর ভাড়া 10 rm রেখেছিল। আসলে রাতে নিরাপত্তার জন্য grab ক্যাশে ভাড়া নেয় না এজন্যই এ সমস্যা। এবারই এই সিস্টেম নতুন পেয়েছি। যদিও আগের বার এটা পাই নাই।
আজকের পর্ব এ পর্যন্তই। আগামী পর্ব থাকছে Genting Highlands নিয়ে। নিশ্চয় পড়বেন অনেক আকর্ষনীয় তথ্য পাবেন।
বাকি পর্ব গুলে পড়তে এখানে ঢু মারতে পারেন।
পর্ব ২ঃ bit.ly/gn-part2 (স্বপ্নপুরি Genting Highlands নিয়ে গল্প সপ্প)
পর্ব ৩ঃ bit.ly/ml-part3 (মালাক্কার পথে প্রান্তরে)
পর্ব ৪ঃ bit.ly/kl-part4 (কুয়ালা লামপুরের অলিতে গলিতে ঘুরাঘুরি)
পর্ব ৫ঃ bit.ly/lk-part5 (দ্বীপ পুরি Langkawi চষে বেড়ানো)
পর্ব ৬ঃ bit.ly/kl-part6 (মালয়েশিয়া ঘুরব, নিজেই ট্যুর প্যাকেজ বানাব)