যেমন ছিল আমার তারুণ্যের জয়োৎসব ২০১৮ এর অভিজ্ঞতা

S M Sarwar Nobin
5 min readMar 9, 2019

--

অনেক ছোট বেলা থেকেই সম্ভবত ২০১০ এর দিক থেকে আমি Munir Hasan এই লোকটির বন্ধুতালিকায়। প্রিয় মানুষগুলোর মধ্য অন্যতম। হঠাৎ দেখি একদিন ক্রাউন্ট সিমেন্ট-প্রথম আলো তারুণ্যের জয়োৎসব ২০১৮ এর অংশগ্রহনকারী চেয়ে পোস্ট। যদি তারুণ্যের জয়োৎসব নিয়ে অনেকগুলো সেমিনার হয়েছে। এমনকি আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে কেন জানি আমি কোন সেমিনার এই অংশ নিতে পারি নাই! তবে এবার ব্যাটে বলে মিলে গেল। পরীক্ষা শেষ বন্ধুরা ট্যুরে যাবে আমি যাব না কোন এক অজ্ঞাত কারণে। বেশ আমি আবেদন করে ফেললাম। আবেদন পত্রের এক প্রশ্নে তো বলেই ফেললাম আমি ট্যুরে যাব না বন্ধুদের সাথে তাই অংশ নিব। তবে আসলেই অংশ নেওয়ার অনেকগুলো কারণ ছিল। তার সব কয়টায় বুট ক্যাম্পে আলোচনা করা হবে এটা জেনেই আবেদন করছিলাম।

বেশ! ফেব্রুয়ারির ২, ২০১৯ তারিখে কাঙ্কিত মেইল পেয়ে গেলাম মুনির স্যারের কাছে থেকে। আমি তো আহল্লাদে আটখানা! যাক অনেক দিন পর ফ্রিতে ২ দিন থাকা খাওয়া যাবে! হা হা! আমি সাথে সাথেই ইমেইলের উত্তর দিলাম। ব্যাস এবার আর ঠেকায় কে? ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় আপন উদ্যোগ ফাউন্ডেশন, লালমাটিয়া, ঢাকাতে আমি হাজির।

সকাল বেলা শুরুতেই রুম খুঁজে ব্যাগ রাখলাম। ডাইনিং এ বসতেই পেয়েগেলাম নতুন কিছু বন্ধু। কথা হল। এবার ক্যাম্প শুরুর পালা। শুরুতেই মুনির স্যার প্রথম টাস্ক দিলেন উপস্থিত ৪৫ জনের সাথে পরিচিত হতে। বেশ কাজে নেমে পড়লাম। কারও নামই শেষ পর্যন্ত মনে রাখলেও সর্বশেষ পরিচয় দাতা বিপ্লবকে খুব ভাল করেই মনে আছে। যদিও ক্যাম্প শেষে প্রায় সবাইকেই চিনে গিয়েছিলাম। নতুন কিছু বন্ধু পেয়েছিলাম। থাক সে গল্প পড়ে হবে ;) উদ্যোক্তা নিয়ে বলেই ৩ টা স্কিলের (Thinking, Problem solving, Speaking skill) কথা বললেন মুনির স্যার। বেশ ভাল লাগল এই ৩ টা স্কিলের কথা শুনে।

এরপরই হুমায়রা শারিমন (এইচ আর স্পেশালিস্ট) ম্যামের সিভি রাইিটং ও ইন্টারভিউ টিপস নিয়ে খুবই উপযোগী সেশন পেলাম। ওনার কথার বেশ কিছু পয়েন্ট নোট নিলাম। সিভি প্রত্যেক চাকরির জন্যই কাস্টমাইজড হওয়া উচিত, ছবি অবশ্যই দিবে, উদ্দেশ্য বা অবজেকটিভ অবশ্যই থাকবে, আর আরেকটি প্রধান জিনিস সেটা হল কভার লেটার অবশ্যই দিবে এটা চাইলেও না চাইলেও।

দুপুরের পর পেলাম ওসামা বিন নূর ভাইয়ের সেশন ওনি ইন্টারেনেটে সুযোগ খোঁজা নিয়ে বেশ কিছু জ্ঞান দিলেন। যদিও অধিকাংশই আমি আগে থেকে জানতাম। এর প্রমাণও দিলাম সেশনেই ;) জার্মান দূতাবাসের ইন্টার্ণশিপ প্রোগাম নিয়ে আমিও কয়েকটা তথ্য দিলাম। আমার নিজের ইচ্ছা আছে এই বিষয়টা নিয়েই একটা ব্লগ লেখা। অতি শীঘ্রই লেখব হয়ত।

এরপর পেলাম আযম ভাই আর শাকিল ভাইয়ের সেশন। আযম ভাই আমার জাবির মানুষ। সরকারি চাকরির বিভিন্ন সুযোগ নিয়ে অনেক তথ্যই দিলেন। যদিও আমার কোন দিনও সরকারি চাকরি করার ইচ্ছা নাই। কেন নাই পরে বলব একদিন।সেশনের মাঝে আমারদের বিদেশে উচ্চ শিক্ষার আগ্রহ দেখে ইএমকে সেন্টারের আউটরিচ কোঅর্ডিনেটর রুহুল ভাইকেও ডাকা হল। ভাই বেশ সুন্দর করে বললেন আমেরিকাতে পড়তে যাওয়ার বিষয়ে বিস্তরিত। কিভাবে কখন আবেদন করতে হয়। GRE/GMAT/TOEFL/IELTS কোনটা কার জন্য সেটাও বললেন। যদিও এই পার্টে আমি খুবই দক্ষ ;) সবই ইএমকে এর শিক্ষা হা হা!

বিকালে পেলাম মাের্শেদ ভাইয়ের সেশন উনিও চাকরি খোঁজা নিয়ে বেশ কিছু উপায় বললেন। একটা টাস্ক ছিলো, যদি নিজে কোন কোম্পানিতে চাকরি করতে চাই তার ছবি আঁকা! বেশ আমিও একটা আঁকলাম। তবে প্রথম দিন একেবারে শেষ সেশনটিতে একটা পুরোপুরি লাইফ জার্নিতে ছিলাম জাবেদ পারভেজ ভাইয়ের সাথে। বেশ মজার সেশন ছিল কখন যে আড়াই ঘন্টা পার করে আমরা ১২:৩০ বাজিয়ে ফেলছিলাম তা কেউ জানি না।

পরদিন সকালে মাসুদ ভাইয়ের প্রফেশনাল জব স্কিল নিয়ে সেশন। সেশন শুরুর আগে এক মজার ঘটনা লক্ষ্য করলাম। হঠাৎ আমার ফেসবুক নেটওয়ার্ক এ ভাইকে পেলাম! দেখি ভাই কোন এক কালে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়ে রাখছিলেন আমি ঝুলায় রাখছি ;) বাহ! দেখে ভাবলাম হায় আমি আজ স্পিকারেরই রিকোয়েস্ট ঝুলায় রাখছি! তবে পরেক্ষণে ভাবলাম এটা আমি ডিজর্ভ করি। কারণ এক কালে খুব নেটওয়ার্কিং করেছি যার ফলেই এটা আজ! ভাইয়ের সেশনে বেশ কিছু জিনিস দেখলাম যদিও কম্পিউটার সায়েন্স এর ছাত্র হওয়ার কারণে আমার অনেকগুলো আগেই জানা ছিল।

এবার পিয়াস ভাইয়ের সেশন। পিয়াস ভাইও আমার জাবির। অনেক ছোট কাল থেকেই ভাইয়ের সাথে পরিচয় কিন্তু এরকম অফিসিয়ালি সেশন পাব তা ভাবি নাই। ভাইয়ের কাছে থেকে জানলাম কোন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিলে রিচ বেশি পাওয়া যায়। আরও অনেক কিছু গোপন তথ্য। Facebook Blueprint সার্টিফিকেশন নিয়েও জানলাম। আর আগে থেকে গুগল এর বিভিন্ন সার্টিফিকেট নিয়ে জানতাম ই। আর ভাইয়ের কাছে থেকেও আরেকটা ট্রিকস জানলাম যা ভাই করে। সিভিতে নিজের অর্জনগুলো আগে দেওয়া নামের পরই। আমি ইতোমধ্যেই ট্রিকস ব্যবহার করে হালকা সফলতাও পেয়েছি =D থাক পরে একদিন সে গল্প হবে।

এবার ডন সামদানী ভাইয়ের সেশন! অনেক দিন পর ভাইয়ের সেশন পাচ্ছি! বেশ উত্তেজিত। ভাই কমিউনিকেশনের কয়েকটা বিষয়ের উপর বেশ কিছু কথা বললেন যদিও এসবও জানা ছিল আমার। কিভাবে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হয়। কিভাবে ইন্টারভিউ বোর্ডে কয়েকজনকে এক সাথে হ্যান্ডেল করতে হয় এসব জটিল বিষয় নিয়েও উনি বেশ ভাল ভাবে খোলসা করলেন।

এবার মক ইন্টারভিউ আর ইউসুফ আলি খানের সেশন। ভদ্রলোক প্রায় ২০ বছরের বেশি সময় ধরে এইচআর ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন। ভদ্রলোককে আমি একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলাম। উনি কেন ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি থেকে সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি আসলেন। এসব! ব্যাস এবার উনার উদ্যোক্তা হওয়ারও গল্প শুনলাম। কিভাবে তা ব্যর্থ হয়েছিল তাও শুনলাম। বেশ মজা আর নতুন কিছু অভিজ্ঞতা পেলাম ভদ্রলোকের কাছে থেকে।

সন্ধ্যার পর ২-৩ দিন নতুন উদ্যোক্তা এলেন “উদ্যোক্তার সাত সেতেরা” সেশন নিতে। এর মধ্য তৌহিদ ভাইয়ের সেশনও আছে! ব্যাস পেয়ে গেলাম প্রশ্ন করার লোক। তবে আমি আশ্চার্য হয়েছিলাম সেদিন ভাইকে দেখে কারণ ওদিন কামরাঙ্গীচরে ভাইয়ের কারখানা প্রায় হাফ ড্রেজার দিয়ে গুরিয়ে দিয়েছে বৈধ হওয়া সত্ত্বেও। ভাইকে বেশ কিছু প্রশ্ন করলাম। অন্যতম একটা প্রশ্ন ছিল “ব্যবসায় বাকি টাকা কিভাবে হ্যান্ডেল করেন?”। উত্তরটা বেশ ভালভাবেই দিলেন ভাই। এরকম ছিল ব্যবসায় কিছু টাকা বাকি রাখতে হয় যদি সেই ক্লাইন্ট নিয়মিত হয়। বেশ ভাল একটা অভিজ্ঞতা পেলাম। যদি আমি কিছু দিন আগেই এক ক্লাইন্টের সাথে ৫ বছরের সম্পর্ক শেষ করেছি বাকি রাখার জন্য। যদিও মনে করি এ দিক থেকে সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল কিন্তু অন্যভাবে সেটা ঠিক বলেই মনে করি। সিনথিয়া আপুর Shajgoj.com নিয়েও বেশ কিছু জিনিস জানলাম।

এবার সবার শেষে সার্টিফিকেট বিতরণি পালা! মুনির স্যার সবার হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিলেন।

মুনির স্যারের কাছে থেকে সার্টিফিকেট গ্রহণ

ব্যাস শেষ হল বুটক্যাম্প। এরপর আমাদের নাইট শো স্টার্ট ;) সবার সাথে ভাল করে পরিচিত হলাম। ফেসবুক বন্ধু হলাম।

পথ ঘোরাই নিজের দিকে সাথে তরুণ লেখিকা দিনা

অপেক্ষা এবার যদি সামনে তারুণ্যের জয়োৎসবে স্পিকার হতে পারি! দেখা যাক কি আছে কপালে :)

--

--

S M Sarwar Nobin
S M Sarwar Nobin

Written by S M Sarwar Nobin

Graduate Research Assistant at UTRGV, USA and Freelance Email Signature Developer

No responses yet